———————– ইরাকের কবিতা ——————-
মূল: ফালিহা হাসান
রূপান্তর : মাসুদুল হক
১.এখন সেই দরজা (The Door Now)
অদৃশ্য কাদামাটিতে তার পা রোপন করা হয়েছে
ভিরু কথার জাদুখেলার মতো
একটি বেমানান মুহূর্তে
কারো জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে
যে এটি উন্মুক্ত করবে
কোনো দর্শনার্থীর হাতই তার মুখ থেকে নির্জনতার রুক্ষতাকে মসৃণ করতে পারে না
আশার কোনো আলো নেই
বা দ্রুত স্পর্শের কোনো আকাঙ্ক্ষা
যতো বেশি সময় কেটে যায়
তার অস্তিত্বের অর্থ ততোই ম্লান হয়
তার চোখ এখন ভয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে
যেন সে কোনো অন্ধকার টানেলের গভীরে শূন্যগর্ভ অনস্তিত্বের বীজ বুনতে দেখছে
২. যুদ্ধ প্রসঙ্গে আমি কথা বলছি
(About war I’m talking)
কী হতো আমি যদি তখন সারাটা সময় ঘুমাতাম
অথবা
১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল শীতনিদ্রায় থাকতাম?
একটি নিরাপদ ভালুক হয়ে
অথবা সমস্ত অঙ্গসহ কাঠের ব্যাঙ হয়ে থাকাটা
তখন অনেক ভালো ছিল ক্ষতিগ্রস্থ আত্মায় আটকে থাকার চেয়ে
যখনই যুদ্ধের ঝড় বইছে তখন তোমার অস্তিত্ব মানেই নির্মমভাবে তোমার চমড়া খসানো,
হ্যাঁ,
মনে আছে
যুদ্ধের সময়
সৈন্যদের মায়েরা
হাত দিয়ে শত চেষ্টা করেও প্রসস্ত দেয়াল গলিয়ে
তাদের ছেলেদের চুল আলতো করে ছুঁতে পারেনি;
পারেনি ওদের ধূলিধূসর মুখ মুছে দিতে,
বার বার
হতাশা তাদের অবিরাম গ্রাস করেছে
আনাড়ি খেলোয়াড়ের হাতে স্কোয়াশের বলের মতো
যদিও প্রত্যাশা তাদের হৃদয় থেকে একটি বিড়ালের মতো লাফিয়ে পড়তে থাকে
শেষে
যদিও তারা কাঁদে না
তবে তাদের চোখ গলে
ফোঁটায় ফোঁটায়
জল পড়তে থাকে
এখন
এই অদৃশ্য আমাদের মতো,
তারা কামনা করে মস্তিষ্কে জেকে বসা সাইরেন থেকে মুক্তি পাবে, আশা করে তারা তা নিরাময় করতে পারবে
আর জাগতে হবে না
প্রতিদিন
বাড়িতে কানের কাছে আর চিৎকার শুনতে হবে না
আমি এখানে
আমি এখানে
যেন কেউ বিস্মৃত একটি পাণ্ডুলিপি পড়ছে
আমাদের মতো অদৃশ্য
আর ভীত হয়ে
একদিন ঠোঁটের বোমাগুলো ফেটে
তাদের নিমজ্জিত করবেই গরম চুম্বনে
…………………
১. ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮, ইরান-ইরাকি যুদ্ধ
২.কাঠ ব্যাঙ: এই ব্যাঙ শীতের সময়ে মারা যায় আর গ্রীষ্মে ফিরে আসে
৩.তোমার ভালবাসা মারমেইডের একটি ভ্রূণ
( Your Love Is a Foetus of Mermaid)
এই তুমি
তোমার আপন ছায়া ছেড়ে
বসে আছো এবং আমার হৃদয়
ভারী ওজনের মতো
কোনো কিছু না জেনেই তোমার সাথে থাকছে
আমরা যখন ট্রেনের অপেক্ষা করি তখনও আসে না
এটাই আমার সমস্ত জীবনের অভীষ্ট
আমি নারী
যে কিনা কিসমিস হিসাবে শুকাতে চায় না তবে সে রয়েছে তোমার তালুতে।
——– ——— ——– ———-
ফালিহা হাসান (১৯৬৭) ইরাকের নাজাফ শহরে জন্মগ্রহণ করেছন। মূলত কবি, শিক্ষক, সম্পাদক, লেখক, নাট্যকার; বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ফালিহা প্রথম নারী যিনি ইরাকের শিশুদের জন্য কবিতা লিখেছিলেন। আরবি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এই কবির ২৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা ইংরেজি, তুর্কমেন, বোসবিহ, ভারতীয়, ফরাসি, ইতালিয়ান, জার্মান, কুর্দি, স্পেন, কোরিয়ান, গ্রীক, সার্বিয়া, আলবেনিয়ান, পাকিস্তানি, রোমানিয়ান, মালায়ালাম, উড়িয়া ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কবি ফালিহা হাসান
তার কবিতা ও ছোট গল্পের জন্য ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।বর্তমানে আমেরিকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। তিনি ২০১৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কারের নোমিনেশন পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে পুশক্রেট পুরস্কার অর্জন করেছেন;
মুনস্টোন চ্যাপবুক প্রতিযোগিতা ২০১৯- এর বিজয়ী তিনি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইরাকের সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রদূত।
Translated into Bengali by Professor Dr. Masudul Hoq