———————-সার্ভিয়ার কবিতা ———————–
মূল:মারিজা নাজথিফার পপভ
রূপান্তর : মাসুদুল হক
১.চাঁদ ভাঙছিল (The Moon Was Breaking)
চাঁদ ভাঙছিল
নদীতে,
আকাঙ্ক্ষার চোখে
দেখছিল ধ্রুবতারা,
অগভীর জলে নগ্ন হয়ে
কীভাবে, মেঘ থেকে ফেনা জন্মে,
শরীর ঘষে
জাগে উষ্ণতা খসে পড়া
উল্কায়…
এবং তার জ্বলন্ত ইচ্ছে ছিল
তাকে কাস্তে চেপে লেহন করায়
পাতার কান্নার মুখোশে
মুখ থেকে…
সে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো
ঔষধি বনজ লতার সুগন্ধ নিলো শ্বাসে
তার চুলের জট থেকে,
গোলাপের মতো লাল…
সে ভেঙে যায়,
ভয় আর লজ্জায় ভেঙ্গে যায়,
চক্র কড়ায় ভরে ওঠে
অজানা তারায়
কী যেন, চমকে ওঠে তাদের পায়
অধীর নীরবতায়
এক যাদুচিত্র আঁকা হচ্ছে
রাত, গোপন আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ
উপচে পড়ছে চাঁদের আলোয়
এবং নিজের আত্মায় …
২.গোপন দলীল (SECRET STAMP)
শাস্তি হিসাবে
আমি আমার মধ্যে আমার চিহ্ন বহন করি।
আমি অবিরাম দাগ কেটে চলি
তোমার অন্ধকার কারাকক্ষের একই জায়গায়,
মুক্তির প্রত্যাশা
শুধু এক আবেগীয় ক্ষুদ্র বাসনা,
আমাকে আবেগের সাথে চুমু খেয়ে
তোমার নীতিহীন ইচ্ছে পূরণ করতে;
সেগুলো আমার গভীরেই কবর দেওয়া আছে।
গোপনতা!
শুধু তোমার জন্য
আমি আমাকে প্রকাশ করব না
কারণ আমি তোমার ভেতরের শিকারীকে ভয় পাই।
তুমি তাকে জান না
কিন্তু সে গুলি চালায়
আমার মধ্যে জেকে থাকা আপাত সমস্ত শীতলতায়।
আমি এসব তোমাকে বিশ্বাস করাতে চাইছি না
এমনকি কবিতায়ও না
কারণ তুমি তা কখনোই বুঝতে পারবে না।
তুমি যথেষ্ট মানসিক দৃঢ় নও
এসব কাটিয়ে আমার আপন হবার মতো
আমরা দুজনে দুজনের মতোই শাস্তি পাচ্ছি।
শুধুই শাস্তি।
আমরা একই চিহ্ন বহন করি
কিন্তু একে অপরকে চিনতে পারি না
আগুনের ভয়ে,
আকাঙ্ক্ষার উন্মাদনায়।
আমরা খুবই ভীত
চিহ্নগুলো ফাপা হাড় থেকে
মুছে ফেলে
মুক্তি পেতে।
আমি আর কিছু বলতে চাই না।
গোপন কথা বেশী বলা উচিত নয়।
আমি আর কোনো সাড়া না দিয়ে
আমার ভেতর অবগাহন করবো।
তুমি তোমার মধ্যে জ্বলো
অথবা কিছু বলো
যদিবা সন্দেহ থাকে।
৩.গুলি ছোঁড়া ! (SHOOT!)
তোমার কাছে বুলেটের কার্তুজ নেই।
শব্দ দিয়ে তৈরি
মারাত্মক তীর রয়েছে,
পাগলামির সন্নিবদ্ধ পায়ে হেঁটে
নেতৃস্থানীয়
আর্তনাদে,
আত্মহত্যা করতে
এর কারণ:
অনুমান,
পূর্বাভাস,
জল্পনা,
স্বীকৃতি,
ধাঁধা।
ধাঁধার উত্তর!
আমি তীর বাঁচিয়ে রেখেছি,
তীরের টঙ্কার গুনে চলছি
এবং আনন্দে আছি বেঁচে থাকতে পেরে,
আমি আরাম আর আনন্দে আছি…
ধাঁধার উত্তরে,
আমার বিশ্বাসে
সব কিছু ভাল,
বিষ তীর
টঙ্কারসহ শব্দে
পুনরায় ছুরিকাঘাত…
৪.যদি (IF)
যদি তুমি কখনো তোমার মূলের সন্ধান করো
আমার অভ্যন্তরের লাঙ্গল ক্ষেত্রে,
তুমি আমার মধ্যে শেকড়বদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে
এবং তোমার শেকড় সাফল্য লাভ করবে
আমার রক্তনালী দিয়ে।
তুমি চারাগাছের মতো বেরিয়ে এসেছো
আমাদের কাছ থেকে, চারা জন্মগ্রহণ করছো,
পুরো বন এবং এর শব্দে
সমস্ত বাতাস এবং ঝড় থেকে।
বন, সূর্যের উচ্চতায় টানা
স্থান এবং স্বাধীনতায় …
ডানা ছড়িয়ে ছিটিয়ে তুমি সর্বদা আমার উপরে থাকো
আলোকিত রডের মতো,
ছাতার মতো
তুমি আমাকে ধ্বংস থেকে বাঁচাও,
তোমার নিজের জন্য,
তোমার থেকেও বাঁচিয়ে রাখো
যদি কখনো তুমি ভেঙ্গে পরো
আমাকে আঘাত করো না
মূলে…
———- ——— ——– ———
মারিজা নাজথিফার পপভ (Marija Najthefer Popov ) ১৯৫৮ সালে সার্বিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক যৌথ, সার্ভিয়ান ও আন্তর্জাতিক কবিতা সংকলনে তার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে; তার দেশসহ বিদেশী ম্যাগাজিন এবং সাহিত্যের কাগজে তিনি নিয়মিত লিখছেন।২০১৮ সালে তার প্রথম বই “I WRITE A WOMAN” প্রকশ পেয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থটিতে নারী, সৃজনশীলতা, অস্তিত্ব এবং প্রেম, কমনীয়তা এবং অর্থের জগতকে ব্যাখ্যা করে জীবনের সমস্ত রঙ ও মননকে তুলে আনতে চেয়েছেন কবি তার কাব্যিক অভিযাত্রার মধ্যে দিয়ে এবং তার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক চেতনা-বিশ্বের সাথে মিশে যায়।
কবি বেশকিছু আন্তর্জাতিক সম্মান এবং পুরস্কার পেয়েছেন।তার কবিতা বহু বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি সার্বিয়া এবং বিশ্বজুড়ে সমকালীন কবিতার বিশিষ্ট কবিদের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক কাব্যসংকলনের সম্পাদনায় নিযুক্ত আছেন।তিনি সার্বিয়ার জেরজানিনে বসবাস করছেন।
Translated into Bengali by Professor Dr. Masudul Hoq