Poems by Tarana Turan Rahimli
——————–আজারবাইজানের কবিতা ————
মূল: তারানা তুরান রাহিমালি
অনুবাদ : মাসুদুল হক
১.এলিজি
আমি ছিলাম পৃথিবীর কাঁধে বসে থাকা
কেবলই এক শিশু ফেরেস্তা।
আমি কোন শয়তান দেখিনি,
শুধু বসে বসে উত্তর লিখছিলাম।
ঈশ্বরের দেওয়া হৃদয় দিয়ে
সবাইকে ভালোবেসে যাচ্ছিলাম,
সবার পথে চলত চলতে
আমিও মরতে প্রস্তুত ছিলাম।
সুখ এক মহাসমুদ্র,
আপন নিয়মে চলে,
এমনকি শয়তানের অন্তরে
জেগে জেগে ঢেউ তোলে
আমার বর্ণিল অনুভূতির সঙ্গে
কবিতার স্বপ্ন নিয়ে,
দেশের কথা নিয়ে
আমি আকাশে ভাসছিলাম।
হঠাৎ আকাশ কেঁপে ওঠে,
আমি পড়ে গেলাম।
সেই থেকে সমস্ত জীবন এখানে আছি
আমি আকাশের দিকে তাকাই আর দুঃখ পাই।
২.তুমি যদি কবিতা লিখতে চাও
কবি বেদনাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে
কবিতায় তুলে আনেন;
প্রতিটি শব্দ তিনি সাহসের সঙ্গে লেখেন
কখনো কলমে , কখনো ছাপার অক্ষরে
কবি হচ্ছেন বিষাদময় কবিতার প্রপিতা
আর কবিতা হচ্ছে বেদনার দৌহিত্র।
ভাগ্য আমাদের কপালের উপর লেখে,
দেবদূত আমাদের কাঁধের উপর লেখে;
কবিও লিখে চলেন জীবনের এক চতুর্থাংশ,
তিনি আত্মার কন্ঠকে তুলে ধরেন কবিতায়;
কেননা কবির কবিতা ভালোবাসার নিঃশ্বাস।
যদি কাব্যচর্চা হয় আজীবন খাঁচা,
যদি কাব্যচর্চা হয় শুধুই বৃথা;
তবুও তুমি যদি কবিতা লিখতে আগ্রহী হও,
তাহলে কবির ভেতর সেই আবেগ আসে কোথা থেকে?
কবিতা হচ্ছে ঈশ্বরের নির্জলা আবেগ।
৩.মৃত ঘোড়ার দিন
আমার দাদার পর্বতারোহের ঘোড়াটি সেদিন মারা গেল,যেটি ছিল বুড়োদের শেষ ঘোড়া
একটি জীবনকাল ঘোড়ার পিঠে কেটে গেছে যাদের;
আমার দাদার হাতের তালুতে
এখনও সেদিনগুলোর স্বাদ লেগে আছে।
যে সময় ভোলগা আর জিগুলি গাড়ির প্রচলন বেড়ে গেছে, কে তখন ঘোড়ায় চড়ে।
সে শুধু আমার দাদা তখনো ঘোড়ার পিঠে বসে
ভাবেন সোলেমান বাদশার সিংহাসনে বসেছেন।
পর্বতারোহের ঘোড়াটি যেদিন মারা গেল
জীবনে প্রথম কেঁদেছিলেন তিনি; বিধ্বস্ত পর্বত থেকে ফেরা এই ভারী মানুষটি।
সেদিন সে এতোটাই বেদনাবিধুর হয়ে পড়েছিল যে; আমার দাদি এমন একজন দরিদ্র মানুষকে
জীবনে প্রথম দেখলেন
যাকে সমস্ত জীবন অত্যাচারী বলে জেনে এসেছেন।
দাদা বুড়ো হয়ে গেলেন, এটিই শেষ তিক্ততা…
তার পরাক্রমতার শেষে তিনি ভীষণ কাঁদলেন
ঘোড়ার পিঠে শেষ গর্জনে চেপে বসা শেষ মানুষটি।
সেদিনের পর থেকে আমার দাদার অশ্রু কেউ দেখেনি
সেদিনই সে তার ক্রোধকে গলা টিপে হত্যা করেছে।
৪.আমি এবং তুমি
আমার জন্য বিশ্বের সব কিছু মূল্যবান
এই যেমন বসন্তের শুরুতে
ভায়োলেট রংয়ের একগুচ্ছ ফুল;
অথচ এই ধূসর নগরীতে
ঝর্ণাসহ সবুজ বন
এসব তোমার জন্য কোনো ব্যাপারই না!
আমার সবচেয়ে প্রিয় অতীত,
যা আমার ছোট্ট সাম্রাজ্য;
আর তোমার কাছে মূল্যবান
আজকের সম্পদ,ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
আমি যে মাটিতে বেড়ে উঠেছি
তা আমার কাছে পরম পবিত্র
পবিত্র প্রতিটি নুড়ি, প্রতিটি পাথর;
অথচ তোমারও একটা স্বদেশের প্রয়োজন
কেননা তুমি একজন নাগরিক।
আমার জন্য ব্যাথাহীন
দিন আর রাতই জীবন;
তোমার জন্য যেমন
গ্রীষ্ম আর শীতের বিনোদন…
তুমি আর আমি একটি আয়নায় দুটি মুখ।
আমাদের একজন গুলি ছোড়ে;
অন্যজন অপার নক্ষত্র হয়ে ওঠে।
আমাদের দুজনের রয়েছে
দুটি ভিন্ন জগৎ ; আছে নিজস্ব আবেগ
এখন আমাকে বলো, কী আমাদের ঐক্যের
বাঁধন দিতে পারে?
৫.আমি আঠারো বছর বয়সেই মরে গেছি
আমি আঠারো বছর বয়সেই মরে গেছি,
ঈশ্বর, আপনি জানেন না।
সে তার যুবতী মেয়েকে কাঁদিয়েছে
সেদিন কোনো স্বজনও কাছে ছিল না।
আমি একটি চঞ্চল মাছ, জলে ডুবে আছি,
আমি বাঁচতে চাই, ওরা আমাকে জলে ফেলে দিয়েছে।
সুতরাং, এখন আমি জীবমৃত!
আমি আর কী বলতে পারি ?
ওরা আমার জীবন নিয়েছে,
আমি যেন-তেন ভাবে আছি।
আমাকে আর জীবন দিয়ে পুনরুত্থিত করা হয়নি
আমি জীবমৃতের মাঝে হাঁটছি।
যেখানে আমার আত্মা ঘুরে বেড়ায়
আমার সেই স্বর্গটি উল্টে গেছে।
আমি আর কত শিশুর স্বপ্নকে মারবো,
আমাকে মৃত স্বপ্নের মধ্যে সমাহিত করা হয়েছে।
সমাধিবেদিও নির্মিত হয়ে গেছে,
বেদির মাথা আর আকাশের দিকে ওঠে না।
যুবতী থাকার গোপন কথাটি জিজ্ঞেস করবেন না,
মৃতরা কখনই বৃদ্ধ হয় না।
———- ————- ————-
তারানা তুরান রাহিমালি সমকালীন সময়ের আজারবাইজানের কবি। আজারবাইজানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। তার কবিতা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আজারবাইজান ও তুর্কি ভাষায় তিনি সমানভাবে পারদর্শী।
Translated into Bengali by Professor Dr. Masudul Hoq